ফরিদপুরের নগরকান্দায় চাঁদাবাজির অভিযোগে দায়ের করা মামলায় মেজর (অব.) গোলাম হায়দারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সোমবার (৩ জুন) দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে যৌথ বাহিনীর একটি দল উপজেলার কোদালিয়া শহীদনগর গ্রাম থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে।
মেজর (অব.) গোলাম হায়দার নগরকান্দা ও সালথা উপজেলা নিয়ে গঠিত ফরিদপুর-২ আসনের প্রতিটি গ্রামের রাস্তার পাশে সড়কের গাছে গাছে এবং বিভিন্ন স্থাপনায় এলাকা থেকে চাঁদাবাজ, মাদক নির্মূল করার জন্য জনগণকে সাহায্য করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে ফেস্টুন লাগান। শেষে তিনিই গ্রেপ্তার হলেন চাঁদাবাজির মামলায়।
গোলাম হায়দার নগরকান্দা উপজেলার কোদালিয়া শহীদনগর গ্রামের বাসিন্দা মৃত হারুন মিয়ার ছেলে। হায়দার ২০১৭ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি সেনাবাহিনী থেকে অবসর গ্রহণ করেন।
তিনি সেনাবাহিনীর ২০ নম্বর কোর্সের সদস্য ছিলেন।চাঁদাবাজির এই মামলায় একই সাথে আরও চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। একজন এজাহারনামীয়। তিনি হলেন কোদালিয়া গ্রামের বাসিন্দা মৃত মোসলেমের ছেলে ও গোলাম হায়দারের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ফরহাদ মাতুব্বর (৪৫)।
গ্রেপ্তার হওয়া বাকি তিনজন তদন্তে প্রাপ্ত আসামি। তারা হলেন- নগরকান্দার শ্রীঙ্গাল গ্রামের মো. হায়দারের ছেলে রাইসুল ইসলাম (৩০), মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে মো. রাব্বী (৩০), কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলার বাশহাটি গ্রামের মো. রাজ্জাক মিয়ার ছেলে মো. শাহ আলম (৩৫)।ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নগরকান্দা থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, মঙ্গলবার দুপুরে মেজর (অব.) গোলাম হায়দারসহ পাঁচজনকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। পরে রিমান্ডে এনে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
তিনি জানান, মেজর (অব.) হায়দারের বিরুদ্ধে পাঁচ লাখ টাকার একটি চাঁদাবাজির মামলা হয়েছে। এ মামলাটি দায়ের করেছেন কোদালিয়া শহীদনগর ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান রাজু মোল্লা। গতকাল সোমবার এ মামলাটি থানায় দায়ের করা হয়। মামলার পর অভিযান চালিয়ে মেজর (অব.) হায়দারসহ এজাহারভুক্ত দুই আসামি এবং আরও তিনজনসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
এ মামলার বাদী কোদালিয়া শহীদনগর ইউপি প্যানেল মেয়র রাজু মোল্লা (৪২)। তিনি নগরকান্দা পৌরসভার ছাগলদী গ্রামের আব্দুস সালামের ছেলে। রাজু মোল্লা পেশায় ডেকোরেটর ব্যবসায়ী। নগরকান্দা বেইলি সেতুর কাছে তার দোকান আছে।
রাজু মোল্লা বলেন, কয়েকদিন আগে গোলাম হায়দার তার সহযোগী ফরহাদকে দিয়ে আমাকে ডেকে পাঠান। আমি তার বাড়ির কাছে গিয়ে দেখি তিনি চেয়ারে বসে আছেন। আমাকে দেখে তিনি বলেন, ‘তোমরা কাবিখা, কাবিটার কাজ কর আমাদের টাকা দাও না কেন। আমাদের খরচ দিতে হবে।’
এ কথায় ভালো-মন্দ কিছু না বলে সেখান থেকে চলে আসি। এরপর গত ২ জুন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে চার-পাঁচটি মোটরসাইকেলে করে কয়েকজন তরুণ আমার দোকানে এসে বলে, ‘মেজর সাহেব তোকে যে পরামর্শ দিয়েছিল, সেভাবে কাজ করছিস না কেন।’ পরে তরুণরা আমাকে হত্যার হুমকি দেয়।
গোলাম হায়দারকে গ্রেপ্তারের সময় যা ঘটেছে
যৌথ বাহিনী কোদালিয়া গ্রামে গোলাম হায়দারের বাড়িতে অভিযান চালায় সোমবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে। এ অভিযানে যুক্ত ছিলেন নগরকান্দা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) কর্মকর্তা আমিরুল ইসলাম।
আমিরুল ইসলাম জানান, অভিযানের সময় তার বাড়ির পাশের মসজিদের মাইক ব্যবহার করে ফরহাদ হোসেন ‘মেজরের বাড়িতে ডাকাত পড়েছে’ বলে গুজব ছড়ান।
এতে আশপাশের এলাকা থেকে মানুষজন ঘটনাস্থলে জড়ো হন। পরে পুলিশ সাইরেন ও মাইকিংয়ের মাধ্যমে এলাকাবাসীকে জানায়— এটি একটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত গুজব, ডাকাতির কোনো ঘটনা ঘটেনি। রাত আড়াইটার দিকে গোলাম হায়দার ও ফরহাদকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে আসা হয়।
৩০ মে রাতে ভবুকদিয়ার গোলাম হায়দারের ভূমিকা
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠক বৈশাখী ইসলাম ইভটিজিংয়ের ঘটনার জন্য এলাকাবাসীর সালিস মেনে নেন। কিন্তু শুক্রবার (৩০ মে) দুপুরে বৈশাখী গোলাম হায়দারের সাথে সাক্ষাতের পর তার পরামর্শে স্থানীয় সালিস না মেনে নেওয়ার ঘোষণা দেন।
সড়ক অবরোধসহ নগরকান্দার ভবুকদিয়ার ঘটনা জটিল করতে ভূমিকা রেখেছিলেন গোলাম হায়দার।
গত ৩০ মে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠক বৈশাখী ইসলামের ওপর হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে উপজেলার ভবুকদিয়া এলাকায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এ কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেন মেজর (অব.) গোলাম হায়দার। শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ চলাকালে সেনাবাহিনীর উপস্থিতিতে তাদের প্রতি আঙুল তুলে উগ্র আচরণ ও অশোভন মন্তব্য করে সমালোচনার মুখে পড়েন মেজর হায়দার। সেই ঘটনার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়